হাসপাতা’লে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের টিকা লোকজনকে গুরুতর অ’সুস্থ হয়ে পড়া থেকেই শুধু রক্ষা করছে না, এটি করো’নাভাই’রাসের সংক্রমণও কমিয়ে দিচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলার।






একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর চালানো ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের চালানো এক গবেষণাতেও।
গবেষকরা বলছেন, এসব গবেষণার ফলাফল “সত্যিকার অর্থেই সুসংবাদ”, তার পরেও তারা অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জো’র দিয়ে বলেছেন, ভাই’রাসটি ঠেকাতে এখনও তার প্রয়োজন রয়েছে।






করো’নাভাই’রাস প্রতিরোধে এর সংক্রমণ ঠেকানো অ’ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
টিকা হয়তো আপনাকে গুরুতর অ’সুস্থ হয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু তারপরেও আপনি আ’ক্রান্ত হতে পারেন এবং এই ভাই’রাসটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে দিতে পারেন।






একারণে করো’নাভাই’রাসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেককে টিকা দিতে হবে।
টিকা নেওয়ার পর যদি আপনার মাধ্যমে ভাই’রাসটি আর ছড়াতে না পারে, তাহলে এটিও গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামা’রির ওপরেও তার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
কারণ একজন মানুষকে যখন টিকা দেওয়া হচ্ছে, তখন সে পরোক্ষভাবে আরেকজন মানুষকেও সংক্রমণের হাত থকে রক্ষা করছে।






কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
কেমব্রিজের এডেনব্রুক্স হাসপাতা’লের কর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তারা করো’নাভাই’রাসে আ’ক্রান্ত হয়েছেন কী’না।
কোনো উপসর্গ না থাকলেও তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।






ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে এই হাসপাতা’লে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়। টিকা দেওয়া হয় হাসপাতা’লের স্টাফদেরও।
এক মাস পর দেখা যায় যারা কাজ করছেন তাদের কাউকে টিকা দেওয়া হয়েছে এবং কেউ কেউ এখনও টিকা নেয়নি।
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায় যে টিকা দেওয়া হয়নি এরকম এক হাজার স্টাফের মধ্যে ১৭ জন করো’নাভাই’রাসে আ’ক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এরকম এক হাজারের মধ্যে পজিটিভ বলে শনাক্ত হচ্ছেন মাত্র চারজন।
এছাড়াও যারা আ’ক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু শরীরে কোনো উপসর্গ নেই, তাদের মধ্যেও সংক্রমণের হার কমে গেছে।






উপসর্গ না থাকার কারণে তারা না জেনেই অন্যদের শরীরেও ভাই’রাসটি ছড়িয়ে দিতে পারছিলেন।
বিজ্ঞানীরা কী’ বলছেন
গবেষণার এসব ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এর বিস্তারিত তথ্য এখনও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে দেখেন নি।
এটা আসলেই একটা সুসংবাদ। লোকজনের খুশি হওয়া উচিত যে টিকা নিলে তারা করো’নাভাই’রাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্যই নয়, অন্যেরাও যাতে তাদের মাধ্যমে আ’ক্রান্ত হতে না পারে সেজন্যও তাদের টিকা নেওয়া উচিত,” বিবিসিকে বলেন ড. মাইক উইক্স, যিনি এই গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন।






তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, টিকাই নিলেই যে পুরোপুরি রক্ষা হয়ে গেল তা-ও নয়।
“টিকা পুরোপুরি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে না। একারণে হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে- এগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।






পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের চালানো এই সাইরেন স্টাডিতে দেখা গেছে ফাইজারের এক ডোজ টিকা সংক্রমণের ঝুঁ’কি ৭০% হ্রাস করে আর দুটো ডোজ নিলে এই ঝুঁ’কি ৮৫% কমে যায়।
অন্যদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিলে সংক্রমণের ঝুঁ’কি অন্তত দুই তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়।
ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের শিক্ষক প্রফেসর লরেন্স ইয়ং বলেছেন, “আ’ক্রান্ত না হলে আপনি ভাই’রাস ছড়াতে পারবেন না। এবং এসব গবেষণায় দেখা গেছে টিকা একজন ব্যক্তিকে (তার হয়তো উপসর্গ নেই) ভাই’রাসটি ছড়ানোর হাত থেকে রক্ষা করে। ”






নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর জনাথন বল বলেছেন, “ফাইজারের এক ডোজ নেওয়ার পর সংক্রমণ যে হারে কমতে দেখা গেছে সেটা আশাব্যঞ্জক।”
“এ থেকে বোঝা যাচ্ছে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে আম’রা লকডাউনের মতো বিধি-নিষেধ থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হবো,” বলেন তিনি।